প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশও উপেক্ষিত

চালকদের ডোপ টেস্ট নিয়ে সুখ-নিদ্রায় বিআরটিএ

Passenger Voice    |    ০৫:২৪ পিএম, ২০২১-১০-০২


চালকদের ডোপ টেস্ট নিয়ে সুখ-নিদ্রায় বিআরটিএ

গণপরিবহনের চালকদের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুধু তাই নয়, প্রায় সময় বাসে ঘটে যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের মতো ঘটনাও। তবে ওইসব অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতে চালকদের ডোপ টেস্ট করার কথা জানিয়েছিল পরিবহন মালিক সমিতি। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে সমিতির পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও টনক নড়েনি কারও। এমনকি কবে নাগাদ এটি শুরু হবে তা এখনও বলতে পারেনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

জানা গেছে, মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছেন গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ওই বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে পরিবহন চালকদের ডোপ টেস্ট করার ঘোষণা দেন। কিন্তু তখন বিআরটিএ ও পুলিশের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ ছিল পরিবহন মালিকদের। ফলে সমিতির সেই সিদ্ধান্ত আর আগায়নি।

এই অবস্থায় ২০২০ বছরের ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২০ উপলক্ষে অনুষ্ঠানে চালকদের ডোপ টেস্ট করার বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা গাড়ি চালাচ্ছে, তারা মাদক সেবন করে কিনা সেই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরে রাখতে হবে। ডোপ টেস্টের মাধ্যমে তা পরীক্ষার করা দরকার। প্রত্যেকটা চালকের এই পরীক্ষাটা একান্তভাবে অপরিহার্য। সব চালককে এই পরীক্ষা করাতে হবে।

আরো পড়ুন: দুই বছরেও চালকদের ডোপ টেস্ট করাতে পারেনি সরকার

প্রধানমন্ত্রী এমন নির্দেশনার পর ওই বছর ২৭ অক্টোবর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তখন কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিল বিআরটিএ। এই নিয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটিকে পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়। কিন্তু এখনও কোনও রূপরেখা চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে হতাশা বাড়ছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর ডোপ টেস্টের প্রস্তুতি নেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। শুধু তাই নয়, ওই সময় বিআইটিএ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ৫টি সুপারিশও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে সুখ-নিদ্রায়।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, চালকদের ডোপ টেস্ট গুরুত্ব সহকারে বিআরটিএ শুরু করার কথা। কিন্তু বিআরটিএ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তবে ডোপ টেস্টের জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। ডোপ টেস্ট শুরু হলে আমরা সবধরনের সহযোগিতা করব।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে ভারী মোটরযানের চালকদের প্রায় ৬৯ শতাংশই মাদকাসক্ত। অন্যদিকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে, প্রতি বছর দেশে যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে, তার ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী চালকের মাদকাসক্তি। চালকদের এ মাদকাসক্তি কমাতে এখন পর্যন্ত নানা উদ্যোগ নিয়েও বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।

আরো পড়ুন: অনলাইনেই মিলবে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পুনঃপরীক্ষার তারিখ

এদিকে, বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নের সময় চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে থাকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে চালকদের ডোপ টেস্ট বা মাদকাসক্তি নিরূপণের কোনো ব্যবস্থা বিআরটিএতে নেই। পরিকল্পনা করা হচ্ছে, প্রথমে লাইসেন্স দেয়ার সময় ও পরবর্তী সময়ে সেটি নবায়নের সময় বাধ্যতামূলকভাবে চালকের ডোপ টেস্ট করা হবে। এতে কোনো চালকের মাদকাসক্তি প্রমাণিত হলে তার লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ডোপ টেস্ট করা খুব জরুরি। এটার ব্যাপকতা অনেক। কারণ বাইরের কান্ট্রিগুলোতে একটা নির্দিষ্ট সময় গাড়ি চালায় চালকরা। অন্য দেশে ৬ ঘণ্টার বেশি গাড়ি চালায় না। সেই দেশগুলোতে মালিক ও পুলিশ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু আমাদের দেশে মালিকদের পুঁজি কম। এছাড়াও মালিকপক্ষ নিজের সম্পদ বাঁচানোর জন্য এতো বেশি জ্ঞানী না। তাই বেশি ঝুঁকি নেয় তারা।

তিনি আরো বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি চালকদের উপর নির্ভর করে। কিন্তু চালকরা মাত্রাতিরিক্ত গাড়ি চালাতে গিয়ে একটা অবসাদ চলে আসে। আর এই অবসাদ দূর করতে গিয়ে মাদক সেবন করে। এতে সড়কে দুর্ঘটনায় কবলে পড়েন বেশিরভাগ চালক। তাই গুরুত্ব বিবেচনায় চালকদের ডোট টেস্ট দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার বলেও মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ডোপ টেস্টের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। তা এখনো সম্পন্ন হয়নি। নীতিমালা তৈরির পর কার্যক্রম শুরু হবে।